Menu

প্রিয় গণিত: গণিতের খোঁজখবর

₹350
Fascinating Mathematics

প্রিয় গণিত: গণিতের খোঁজখবর

Product details

অশোক কুমার মল্লিক

হার্ডবাউন্ড

১২৯ পাতা

পশ্চিমবঙ্গ গণিত পরিষৎ

বলে নেওয়া জরুরি এই ধরনের লেখালেখিকে প্রাজ্ঞমহল 'বিনোদনমূলক গণিতচর্চা'র (Recreational Mathematics) আখ্যায় চিহ্নিত করে থাকেন। বিষয়টি বাঙালি গণিতপিপাসু পাঠক মহলে অজানা নয়। যে কোনো জ্ঞানচর্চার পরিসরকে দু'ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। একটি প্রথামাফিক জ্ঞানমূলক-যেটি পাঠ্য বইয়ের সীমায় আবদ্ধ। মৌলিক গণিত গবেষণা ঘিরে যে আরব্ধ উচ্চমার্গের জ্ঞানচর্চা তাও এই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়টি হল অ-প্রথামাফিক (popular বা amateur) জ্ঞানক্ষেত্র যেটিকে ঘিরে যথেষ্ট মান্যতা লক্ষ করা যায় সর্বত্রই। অনেক অতি বিশিষ্ট জ্ঞানীগুণীজনও সাধারণের জন্য যখন কলম ধরেন (আইনস্টাইন থেকে স্টিফেন হকিং বা আরও অনেকেই) তখন তা এভাবেই অভিহিত হয়ে থাকে।

বাংলাভাষায় গণিতচর্চার শুরুটা ধরা হয় 1818 থেকে যে বছর 'অঙ্ক পুস্তকং' বা 'মে-গণিত' প্রকাশিত হয়েছিল শ্রীরামপুর থেকে। এটি তথাকথিত অর্থে স্কুল পাঠ্য বই ছিল না। দৈনন্দিন হাট-বাজারের খুচরো-পাইকারি ব্যবসায়ীদের দর-দাম সামলাতে ব্যবহৃত হত। বইটি 100 বছরের বেশি বেঁচে ছিল। অনেক সংস্করণ হয়েছিল। পরবর্তীতে স্কুল পাঠ্য গণিত বই শিক্ষার আধুনিকীকরণের হাত ধরে আপন নিয়মে এগিয়েছে।

স্কুল-কলেজের পাঠ্য গণিতচর্চার আবশ্যিক জ্ঞানার্জনের হাত ধরেই অবসরের গণিত-আগ্রহ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে নেট দুনিয়া এই আগ্রহকে দ্রুততর করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে এবং আপন খেয়ালে স্বাধীনভাবে উত্তর খুঁজতে অভ্যস্ত নয়। প্রায়শই গোড়া কাঁচা থাকায় উপরে ওঠার ব্যাপারটা শুরুর আগেই থেমে যায়। এ যাবৎ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বেশিরভাগ অবসরমূলক গণিতগ্রন্থ তুলনায় বেশ হালকা মেজাজের। বিষয়টির উপস্থাপনা যদি বিতর্কমূলক হয়ও, তাতে আপত্তির কিছু দেখছি না। অধ্যাপক মল্লিকের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরতেই এই প্রসঙ্গটি আলোচনায় আনলাম। ওঁর আগে প্রকাশিত দুটি বাংলা গণিত গ্রন্থ এ যাবৎ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গণিত গ্রন্থাদির মধ্যে 'ব্যতিক্রমী' হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার অবশ্য দাবিদার বলে মনে করি।

বর্তমান গ্রন্থে রয়েছে 10-টি গণিত বিষয়ক নিবন্ধ ও 1-টি সংক্ষিপ্ত গণিত-ইতিহাসমূলক রচনা। প্রত্যেকটি প্রবন্ধের পরিসর একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে সুচারু ভাবনায় ধীর পদক্ষেপে মূল বিষয় বস্তুর গহনে প্রবেশ। প্রথম প্রবন্ধ-'এরাটোস্থেনিসের ছাঁকনি ও অয়লারের সোনার চাবি' রচনাটি। ইতিপূর্বে বাংলা ভাষায় এরাটোস্থেনিস নিয়ে অনেক লেখাই নজরে এসেছে। কিন্তু এই লেখাটিতে একটি পরিণত অনুশীলনে সার্বিক বিষয়কে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত দক্ষতায় তুলে আনা হয়েছে বিষয়বস্তুকে লঘু না করে। রচনা থেকেই জানা যায় বিষয়টির গভীরে আরও অনেক জগৎখ্যাত গণিতজ্ঞদের অংশভাগ আছে। যেমন, জ্যাকব বার্নোলি, ভাই জোহানন ও পুত্র ড্যানিয়েল। আছেন গোল্ডবাক, লাইবনিৎস, ডি-ময়ভার, রিমান এঁরাও। একটা রচনাকে সম্পূর্ণতা দেওয়ায় লেখকের এই অপরাজিত যত্ন ও নিষ্ঠা একান্তভাবে শিক্ষণীয়। এসব থেকে যদি একটা নতুন ধারা তৈরি করা যায় উচ্চগণিত চিন্তার পরিশীলিত আবর্তে।

এখানে 5-টি রচনা সংখ্যা জগতের নানা বিষয়ে, 1-টি ত্রিকোণমিতি, 3-টি জ্যামিতি ভাবনার আশেপাশে এবং 1-টি প্রশ্ন-উত্তর বিষয়ক কয়েকটি সমস্যা (12-টি) ঘিরে। গণিত জগতের বিশালতা আজ বহু বিস্তারে পল্লবিত। সভ্যতার উত্তরণ ও বিস্তারে গণিত আছে সর্বাগ্রে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যেন সস্তা-উত্তরণ (made easy নির্ভর পাঠ্যপুস্তক-প্রশ্ন ব্যবস্থা)-কে দূরে সরিয়ে সার্বিক জ্ঞানচর্চার পরিকাঠামোকে গড়ে তোলা হয়। অধ্যাপক মল্লিক একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞ ও সম্মানিত বিজ্ঞানব্যক্তিত্ব হয়েও মাতৃভাষায় নিজের দেশের ছাত্র-ছাত্রী সমাজকে উচ্চ আদর্শে দীক্ষিত করার ব্রতে সমর্পিত প্রাণ হিসাবে নিবেদিত আছেন। এটা আমাদের কাছে বিশেষ প্রাপ্তিও বটে।


লেখক পরিচিতি:

অধ্যাপক মল্লিক পেশাগত পরিচয়ে একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলবিদ (Mechanical Engineer)। প্রথম জীবনে অধ্যয়ন করেছেন বর্তমানের আই.আই.ই.এস.টি., শিবপুর, হাওড়ায়। পরে অধ্যাপনা করেছেন 1970-1971 এবং 1971-2009 সময়কালে, যথাক্রমে দিল্লি ও কানপুর আই.আই.টি. প্রতিষ্ঠানে। INSA ও কানপুর আই.আই.টি. তাঁকে বিশিষ্ট শিক্ষকের (Distinguished Teacher Award) সম্মান দিয়েছে। এছাড়াও তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানির বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অনারারি ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। প্রফেসর মল্লিক ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল একাডেমির নির্বাচিত ফেলো। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হলো ভাইব্রেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, নন-লিনিয়ার ডায়নামিক্স ও কাইনেমেটিক্স। পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় পর্যায়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে লেখালিখি করেন। 

একবার কথায় কথায় তিনি জানিয়েছিলেন, কলেজের গ্রন্থাগারটি ছিল অতীব সমৃদ্ধ। এখান থেকেই তিনি গণিতের জনপ্রিয় গ্রন্থরাজিতে আকৃষ্ট হন। এবং বিশেষ করে সংখ্যা গণিতের নানা ধরনের পাঠচর্চায় তিনি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে পড়েন। অবসরের পর তিনি এই চর্চাটিকেই জীবনসঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন আপন খেয়ালে।

Product details

অশোক কুমার মল্লিক

হার্ডবাউন্ড

১২৯ পাতা

পশ্চিমবঙ্গ গণিত পরিষৎ

বলে নেওয়া জরুরি এই ধরনের লেখালেখিকে প্রাজ্ঞমহল 'বিনোদনমূলক গণিতচর্চা'র (Recreational Mathematics) আখ্যায় চিহ্নিত করে থাকেন। বিষয়টি বাঙালি গণিতপিপাসু পাঠক মহলে অজানা নয়। যে কোনো জ্ঞানচর্চার পরিসরকে দু'ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। একটি প্রথামাফিক জ্ঞানমূলক-যেটি পাঠ্য বইয়ের সীমায় আবদ্ধ। মৌলিক গণিত গবেষণা ঘিরে যে আরব্ধ উচ্চমার্গের জ্ঞানচর্চা তাও এই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়টি হল অ-প্রথামাফিক (popular বা amateur) জ্ঞানক্ষেত্র যেটিকে ঘিরে যথেষ্ট মান্যতা লক্ষ করা যায় সর্বত্রই। অনেক অতি বিশিষ্ট জ্ঞানীগুণীজনও সাধারণের জন্য যখন কলম ধরেন (আইনস্টাইন থেকে স্টিফেন হকিং বা আরও অনেকেই) তখন তা এভাবেই অভিহিত হয়ে থাকে।

বাংলাভাষায় গণিতচর্চার শুরুটা ধরা হয় 1818 থেকে যে বছর 'অঙ্ক পুস্তকং' বা 'মে-গণিত' প্রকাশিত হয়েছিল শ্রীরামপুর থেকে। এটি তথাকথিত অর্থে স্কুল পাঠ্য বই ছিল না। দৈনন্দিন হাট-বাজারের খুচরো-পাইকারি ব্যবসায়ীদের দর-দাম সামলাতে ব্যবহৃত হত। বইটি 100 বছরের বেশি বেঁচে ছিল। অনেক সংস্করণ হয়েছিল। পরবর্তীতে স্কুল পাঠ্য গণিত বই শিক্ষার আধুনিকীকরণের হাত ধরে আপন নিয়মে এগিয়েছে।

স্কুল-কলেজের পাঠ্য গণিতচর্চার আবশ্যিক জ্ঞানার্জনের হাত ধরেই অবসরের গণিত-আগ্রহ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে নেট দুনিয়া এই আগ্রহকে দ্রুততর করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে এবং আপন খেয়ালে স্বাধীনভাবে উত্তর খুঁজতে অভ্যস্ত নয়। প্রায়শই গোড়া কাঁচা থাকায় উপরে ওঠার ব্যাপারটা শুরুর আগেই থেমে যায়। এ যাবৎ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বেশিরভাগ অবসরমূলক গণিতগ্রন্থ তুলনায় বেশ হালকা মেজাজের। বিষয়টির উপস্থাপনা যদি বিতর্কমূলক হয়ও, তাতে আপত্তির কিছু দেখছি না। অধ্যাপক মল্লিকের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরতেই এই প্রসঙ্গটি আলোচনায় আনলাম। ওঁর আগে প্রকাশিত দুটি বাংলা গণিত গ্রন্থ এ যাবৎ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গণিত গ্রন্থাদির মধ্যে 'ব্যতিক্রমী' হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার অবশ্য দাবিদার বলে মনে করি।

বর্তমান গ্রন্থে রয়েছে 10-টি গণিত বিষয়ক নিবন্ধ ও 1-টি সংক্ষিপ্ত গণিত-ইতিহাসমূলক রচনা। প্রত্যেকটি প্রবন্ধের পরিসর একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে সুচারু ভাবনায় ধীর পদক্ষেপে মূল বিষয় বস্তুর গহনে প্রবেশ। প্রথম প্রবন্ধ-'এরাটোস্থেনিসের ছাঁকনি ও অয়লারের সোনার চাবি' রচনাটি। ইতিপূর্বে বাংলা ভাষায় এরাটোস্থেনিস নিয়ে অনেক লেখাই নজরে এসেছে। কিন্তু এই লেখাটিতে একটি পরিণত অনুশীলনে সার্বিক বিষয়কে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত দক্ষতায় তুলে আনা হয়েছে বিষয়বস্তুকে লঘু না করে। রচনা থেকেই জানা যায় বিষয়টির গভীরে আরও অনেক জগৎখ্যাত গণিতজ্ঞদের অংশভাগ আছে। যেমন, জ্যাকব বার্নোলি, ভাই জোহানন ও পুত্র ড্যানিয়েল। আছেন গোল্ডবাক, লাইবনিৎস, ডি-ময়ভার, রিমান এঁরাও। একটা রচনাকে সম্পূর্ণতা দেওয়ায় লেখকের এই অপরাজিত যত্ন ও নিষ্ঠা একান্তভাবে শিক্ষণীয়। এসব থেকে যদি একটা নতুন ধারা তৈরি করা যায় উচ্চগণিত চিন্তার পরিশীলিত আবর্তে।

এখানে 5-টি রচনা সংখ্যা জগতের নানা বিষয়ে, 1-টি ত্রিকোণমিতি, 3-টি জ্যামিতি ভাবনার আশেপাশে এবং 1-টি প্রশ্ন-উত্তর বিষয়ক কয়েকটি সমস্যা (12-টি) ঘিরে। গণিত জগতের বিশালতা আজ বহু বিস্তারে পল্লবিত। সভ্যতার উত্তরণ ও বিস্তারে গণিত আছে সর্বাগ্রে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যেন সস্তা-উত্তরণ (made easy নির্ভর পাঠ্যপুস্তক-প্রশ্ন ব্যবস্থা)-কে দূরে সরিয়ে সার্বিক জ্ঞানচর্চার পরিকাঠামোকে গড়ে তোলা হয়। অধ্যাপক মল্লিক একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞ ও সম্মানিত বিজ্ঞানব্যক্তিত্ব হয়েও মাতৃভাষায় নিজের দেশের ছাত্র-ছাত্রী সমাজকে উচ্চ আদর্শে দীক্ষিত করার ব্রতে সমর্পিত প্রাণ হিসাবে নিবেদিত আছেন। এটা আমাদের কাছে বিশেষ প্রাপ্তিও বটে।


লেখক পরিচিতি:

অধ্যাপক মল্লিক পেশাগত পরিচয়ে একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলবিদ (Mechanical Engineer)। প্রথম জীবনে অধ্যয়ন করেছেন বর্তমানের আই.আই.ই.এস.টি., শিবপুর, হাওড়ায়। পরে অধ্যাপনা করেছেন 1970-1971 এবং 1971-2009 সময়কালে, যথাক্রমে দিল্লি ও কানপুর আই.আই.টি. প্রতিষ্ঠানে। INSA ও কানপুর আই.আই.টি. তাঁকে বিশিষ্ট শিক্ষকের (Distinguished Teacher Award) সম্মান দিয়েছে। এছাড়াও তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানির বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অনারারি ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। প্রফেসর মল্লিক ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল একাডেমির নির্বাচিত ফেলো। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হলো ভাইব্রেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, নন-লিনিয়ার ডায়নামিক্স ও কাইনেমেটিক্স। পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় পর্যায়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে লেখালিখি করেন। 

একবার কথায় কথায় তিনি জানিয়েছিলেন, কলেজের গ্রন্থাগারটি ছিল অতীব সমৃদ্ধ। এখান থেকেই তিনি গণিতের জনপ্রিয় গ্রন্থরাজিতে আকৃষ্ট হন। এবং বিশেষ করে সংখ্যা গণিতের নানা ধরনের পাঠচর্চায় তিনি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে পড়েন। অবসরের পর তিনি এই চর্চাটিকেই জীবনসঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন আপন খেয়ালে।

You might like these