বিজ্ঞান লিখন শারদীয় ২০২৫
বিজ্ঞান লিখন শারদীয় ২০২৫
Product details
সম্পাদক: শ্রী পঞ্চানন মণ্ডল ও ড. দীপঙ্কর মান্না
পেপারব্যাক
২৪০ পাতা
বিজ্ঞান কথা
শরৎ এলেই বাঙালির হৃদয়ে এক দোলা লাগে। উৎসবে মেতে উঠি কমবেশি সবাই। প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজে ওঠে। আকাশে ভেসে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘরাশি, মাঠে দোল খায় কাশফুল, আকাশে বাতাসে বেজে ওঠে উৎসবের আগমনী সুর। তাই শরৎ ঋতু যেন আনন্দ আর প্রত্যাশার এক উৎসবমঞ্চ। কিন্তু প্রকৃতির এই রূপ বদল কেবল সৌন্দর্যেরই নয়, এর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানও। সূর্যের কৌণিক অবস্থান বদলায়, দিন ছোট হতে শুরু করে, আলো-আঁধারের খেলায় গড়ে ওঠে নতুন এক ঋতুর ছন্দ। এই পরিবর্তন শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়, প্রতিটি মানুষের মনেও নতুন সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়। তৈরি হয় এক গভীর প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণে বিজ্ঞান মানুষের নিরন্তর সঙ্গী।
তবে উৎসব মানেই কেবল উদ্দীপনা আর জাঁকজমকপূর্ণ আড়ম্বর নয়; উৎসব মানে মন ভরে ওঠা, হৃদয়ের খোলা জানালায় আলোর আবেশ আর আনন্দের আনাগোনা। এই সময় আমরা প্রিয়জনের সাথে আড্ডা দিই, গান শুনি, গল্প উপন্যাস পড়ি, বেরিয়ে পড়ি অজানা গন্তব্যে কিংবা ভেসে যাই মিলনমেলার উচ্ছ্বাসে। কিন্তু উৎসব কেবল শিল্পকলার নয়, বিজ্ঞানেরও হতে পারে। সেই বোধ থেকেই গতবছরের মতো এবারেও প্রকাশিত হল শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫।
নিউটন বলেছিলেন- "আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি। কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক, যে কেবল সমুদ্র উপকূলে খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর সাধারণ পাথর সন্ধান করছে। অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল।" এই সত্যের মহাসমুদ্র আবিষ্কারের নেশাই বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন "আমরা সবচেয়ে সুন্দর যে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি তা হল রহস্যময়তা। এটি হল সেই মৌলিক আবেগ, যা প্রকৃত বিজ্ঞান এবং শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।" অর্থাৎ বিজ্ঞানের মূলে রয়েছে রহস্যের সৌন্দর্য। সেই রহস্যের খোঁজ করতেই তো আমরা বারবার বিজ্ঞানের পথে হাঁটি। সাহিত্য পত্রিকা যেমন হৃদয়ে আনন্দ জাগায়, বিজ্ঞান পত্রিকাও তেমনই প্রকৃতির রহস্য উন্মোচিত করে আমাদের বিস্মিত করে। আমাদের জ্ঞানের স্পৃহা বাড়িয়ে বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করে।
গ্যালিলিও বলেছিলেন "সব সত্য একবার আবিষ্কৃত হলে তা বোঝা সহজ হয়; মূল কথা হলো সেগুলো আবিষ্কার করা।" আমাদের বিজ্ঞান লিখন-এর লেখকগণ সেই আবিষ্কারের আনন্দকেই গল্পচ্ছলে, সহজ সরল বাংলা ভাষায় তুলে ধরেছেন শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫ পত্রিকায়। মহাবিশ্বের অপার রহস্য থেকে শুরু করে প্রকৃতির বিস্ময় ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আবিষ্কারের নানা জানা অজানা কথা উঠে এসেছে এবারের বিজ্ঞান লিখন-এ। পরিবেশ, বিবর্তন, জিনতত্ত্বসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার ও গবেষণার আধুনিক অগ্রগতি লিপিবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি বরেণ্য বিজ্ঞান মনিষীদের অবদানের কথা এই প্রত্রিকার মান বাড়াবে বলে আমারদের ধারনা। বিজ্ঞানের বিশেষ প্রবন্ধ, ছাত্রছাত্রীদের লেখা আর ছোটদের পাতা এই পত্রিকার নবতম সংযোজন, যা নিশ্চয়ই পাঠকদের মন কাড়বে। সেইসঙ্গে থাকছে এক অনন্য প্রতিভাশালী আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার।
কার্ল সেগান যেমন বলেছিলেন "Somewhere, something incredible is waiting to be known." পাঠকরা হয়তো সেই অজানা বিস্ময়ের খোঁজই পেয়ে যাবেন এবারের শারদীয় সংখ্যার পাতায় পাতায়। এই শারদীয় সংখ্যা হয়ে উঠুক পাঠকের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই সংখ্যার উদ্দেশ্য কেবল বিজ্ঞানের তথ্য পরিবেশন নয়, বরং জ্ঞানের আনন্দ, বিজ্ঞানের বিস্ময়, আর অজানাকে জানার এক অপার তৃপ্তি অনুভূতি।
জগদীশচন্দ্র বলেছিলেন "বিজ্ঞানও সংস্কৃতির অঙ্গ"। তাই অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান, আর কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞান সংস্কৃতি গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি। বিজ্ঞানচর্চাও এক সাংস্কৃতিক চর্চা। বিজ্ঞানচর্চা ভাববাদী ধারণার বিপরীতে এক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের জন্ম দেয়। যে সমাজ বিশ্বাসে ভর করে নয়, বরং এগিয়ে চলে বিজ্ঞান ও যুক্তির পথ বেয়ে। তবে এই পথ একদিনে তৈরি হয় নি। বহু বছর ধরে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার যে সত্যানুসন্ধানের পথ দেখিয়েছিলেন, সেই পথ অনুসরণ করে ঘটে চলেছে বিজ্ঞানের নিত্য নতুন গবেষণা ও আবিস্কার। তাই সেইসব অতীত ও বর্তমান গবেষণা, আবিষ্কার বা উদ্ভাবনার কথা, এবং সেইসাথে গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কথা প্রচার করা খুব জরুরি। কারণ বর্তমান প্রজন্মকে বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু না করতে পারলে সার্বিকভাবে বিজ্ঞান চেতনা গড়ে তোলা কঠিন।
তাই সহজ সরল মাতৃভাষায় বিজ্ঞানকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের যে গৌরবময় ঐতিহ্য আছে তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরন্তর করে চলেছে আমাদের সবার বিজ্ঞানকথা। তাই সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আপামর বিজ্ঞানপ্রেমী বাঙালির কাছে সহজ সরল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের ডালি সাজিয়ে দিতে বিজ্ঞানকথা-র এক অনন্য প্রয়াস এই বিজ্ঞান লিখন। বিজ্ঞানকথা-র মতো বিজ্ঞান লিখনও এখন আন্তর্জাতিক। বিজ্ঞানকথা-র তিন লক্ষাধিক সদস্য ও বিজ্ঞান লিখন-এর পাঠকগণ ছড়িয়ে রয়েছেন সারা বিশ্বব্যাপী।
শারদীয়া বিজ্ঞান লিখন ২০২৫-এর লেখকগণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক একজন বিশেষজ্ঞ ও অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে, বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করতে এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে কলম ধরেছেন। তাঁদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞ। আমাদের অত্যন্ত প্রিয় বিজ্ঞানকথা-র পরিচালকমণ্ডলীর সবার সদিচ্ছা, নিরলস পরিশ্রম ও সহযোগিতা ছাড়া এই শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। সেইসাথে বিজ্ঞান লিখন-এর গ্রন্থসজ্জার কারিগর প্রসেনজিৎ কোনার কে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
বিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ বা তত্ত্বসমূহ বিস্তারিত উল্লেখ না করে, সর্বোস্তরের পাঠকের কথা ভেবে বেশিরভাগ প্রবন্ধ লেখা হয়েছে সহজ সরল গল্পকথায়। যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করার। তাই পাঠকের মতামত কিংবা কোন পরামর্শ স্বাগত। বিজ্ঞানকথাতেও যার আলোচনা করা যেতে পারে। আসুন সবাই মিলে বিজ্ঞানকেও আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ করে তুলি। শরৎ যেমন আমাদের মনকে নতুন আলোয় ভরিয়ে তোলে, তেমনি বিজ্ঞানও হয়ে উঠুক আমাদের আলোক দিশা। শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫-এর প্রতিটি লেখা পাঠকের কাছে হয়ে উঠুক আলোর প্রদীপ।
আমরা আশা করছি, গতবারের মতো এবারের শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫ পত্রিকাও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানপ্রেমী প্রতিটি মানুষের বিজ্ঞান পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি বিজ্ঞান চেতনার বিকাশে সার্বিক ভূমিকা রাখবে।
'আসুন সবাই মিলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই।'
Product details
সম্পাদক: শ্রী পঞ্চানন মণ্ডল ও ড. দীপঙ্কর মান্না
পেপারব্যাক
২৪০ পাতা
বিজ্ঞান কথা
শরৎ এলেই বাঙালির হৃদয়ে এক দোলা লাগে। উৎসবে মেতে উঠি কমবেশি সবাই। প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজে ওঠে। আকাশে ভেসে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘরাশি, মাঠে দোল খায় কাশফুল, আকাশে বাতাসে বেজে ওঠে উৎসবের আগমনী সুর। তাই শরৎ ঋতু যেন আনন্দ আর প্রত্যাশার এক উৎসবমঞ্চ। কিন্তু প্রকৃতির এই রূপ বদল কেবল সৌন্দর্যেরই নয়, এর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানও। সূর্যের কৌণিক অবস্থান বদলায়, দিন ছোট হতে শুরু করে, আলো-আঁধারের খেলায় গড়ে ওঠে নতুন এক ঋতুর ছন্দ। এই পরিবর্তন শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়, প্রতিটি মানুষের মনেও নতুন সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়। তৈরি হয় এক গভীর প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণে বিজ্ঞান মানুষের নিরন্তর সঙ্গী।
তবে উৎসব মানেই কেবল উদ্দীপনা আর জাঁকজমকপূর্ণ আড়ম্বর নয়; উৎসব মানে মন ভরে ওঠা, হৃদয়ের খোলা জানালায় আলোর আবেশ আর আনন্দের আনাগোনা। এই সময় আমরা প্রিয়জনের সাথে আড্ডা দিই, গান শুনি, গল্প উপন্যাস পড়ি, বেরিয়ে পড়ি অজানা গন্তব্যে কিংবা ভেসে যাই মিলনমেলার উচ্ছ্বাসে। কিন্তু উৎসব কেবল শিল্পকলার নয়, বিজ্ঞানেরও হতে পারে। সেই বোধ থেকেই গতবছরের মতো এবারেও প্রকাশিত হল শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫।
নিউটন বলেছিলেন- "আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি। কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক, যে কেবল সমুদ্র উপকূলে খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর সাধারণ পাথর সন্ধান করছে। অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল।" এই সত্যের মহাসমুদ্র আবিষ্কারের নেশাই বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন "আমরা সবচেয়ে সুন্দর যে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি তা হল রহস্যময়তা। এটি হল সেই মৌলিক আবেগ, যা প্রকৃত বিজ্ঞান এবং শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।" অর্থাৎ বিজ্ঞানের মূলে রয়েছে রহস্যের সৌন্দর্য। সেই রহস্যের খোঁজ করতেই তো আমরা বারবার বিজ্ঞানের পথে হাঁটি। সাহিত্য পত্রিকা যেমন হৃদয়ে আনন্দ জাগায়, বিজ্ঞান পত্রিকাও তেমনই প্রকৃতির রহস্য উন্মোচিত করে আমাদের বিস্মিত করে। আমাদের জ্ঞানের স্পৃহা বাড়িয়ে বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করে।
গ্যালিলিও বলেছিলেন "সব সত্য একবার আবিষ্কৃত হলে তা বোঝা সহজ হয়; মূল কথা হলো সেগুলো আবিষ্কার করা।" আমাদের বিজ্ঞান লিখন-এর লেখকগণ সেই আবিষ্কারের আনন্দকেই গল্পচ্ছলে, সহজ সরল বাংলা ভাষায় তুলে ধরেছেন শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫ পত্রিকায়। মহাবিশ্বের অপার রহস্য থেকে শুরু করে প্রকৃতির বিস্ময় ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আবিষ্কারের নানা জানা অজানা কথা উঠে এসেছে এবারের বিজ্ঞান লিখন-এ। পরিবেশ, বিবর্তন, জিনতত্ত্বসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার ও গবেষণার আধুনিক অগ্রগতি লিপিবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি বরেণ্য বিজ্ঞান মনিষীদের অবদানের কথা এই প্রত্রিকার মান বাড়াবে বলে আমারদের ধারনা। বিজ্ঞানের বিশেষ প্রবন্ধ, ছাত্রছাত্রীদের লেখা আর ছোটদের পাতা এই পত্রিকার নবতম সংযোজন, যা নিশ্চয়ই পাঠকদের মন কাড়বে। সেইসঙ্গে থাকছে এক অনন্য প্রতিভাশালী আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার।
কার্ল সেগান যেমন বলেছিলেন "Somewhere, something incredible is waiting to be known." পাঠকরা হয়তো সেই অজানা বিস্ময়ের খোঁজই পেয়ে যাবেন এবারের শারদীয় সংখ্যার পাতায় পাতায়। এই শারদীয় সংখ্যা হয়ে উঠুক পাঠকের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই সংখ্যার উদ্দেশ্য কেবল বিজ্ঞানের তথ্য পরিবেশন নয়, বরং জ্ঞানের আনন্দ, বিজ্ঞানের বিস্ময়, আর অজানাকে জানার এক অপার তৃপ্তি অনুভূতি।
জগদীশচন্দ্র বলেছিলেন "বিজ্ঞানও সংস্কৃতির অঙ্গ"। তাই অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান, আর কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞান সংস্কৃতি গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি। বিজ্ঞানচর্চাও এক সাংস্কৃতিক চর্চা। বিজ্ঞানচর্চা ভাববাদী ধারণার বিপরীতে এক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের জন্ম দেয়। যে সমাজ বিশ্বাসে ভর করে নয়, বরং এগিয়ে চলে বিজ্ঞান ও যুক্তির পথ বেয়ে। তবে এই পথ একদিনে তৈরি হয় নি। বহু বছর ধরে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার যে সত্যানুসন্ধানের পথ দেখিয়েছিলেন, সেই পথ অনুসরণ করে ঘটে চলেছে বিজ্ঞানের নিত্য নতুন গবেষণা ও আবিস্কার। তাই সেইসব অতীত ও বর্তমান গবেষণা, আবিষ্কার বা উদ্ভাবনার কথা, এবং সেইসাথে গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কথা প্রচার করা খুব জরুরি। কারণ বর্তমান প্রজন্মকে বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু না করতে পারলে সার্বিকভাবে বিজ্ঞান চেতনা গড়ে তোলা কঠিন।
তাই সহজ সরল মাতৃভাষায় বিজ্ঞানকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের যে গৌরবময় ঐতিহ্য আছে তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরন্তর করে চলেছে আমাদের সবার বিজ্ঞানকথা। তাই সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আপামর বিজ্ঞানপ্রেমী বাঙালির কাছে সহজ সরল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের ডালি সাজিয়ে দিতে বিজ্ঞানকথা-র এক অনন্য প্রয়াস এই বিজ্ঞান লিখন। বিজ্ঞানকথা-র মতো বিজ্ঞান লিখনও এখন আন্তর্জাতিক। বিজ্ঞানকথা-র তিন লক্ষাধিক সদস্য ও বিজ্ঞান লিখন-এর পাঠকগণ ছড়িয়ে রয়েছেন সারা বিশ্বব্যাপী।
শারদীয়া বিজ্ঞান লিখন ২০২৫-এর লেখকগণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক একজন বিশেষজ্ঞ ও অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে, বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করতে এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে কলম ধরেছেন। তাঁদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞ। আমাদের অত্যন্ত প্রিয় বিজ্ঞানকথা-র পরিচালকমণ্ডলীর সবার সদিচ্ছা, নিরলস পরিশ্রম ও সহযোগিতা ছাড়া এই শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। সেইসাথে বিজ্ঞান লিখন-এর গ্রন্থসজ্জার কারিগর প্রসেনজিৎ কোনার কে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
বিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ বা তত্ত্বসমূহ বিস্তারিত উল্লেখ না করে, সর্বোস্তরের পাঠকের কথা ভেবে বেশিরভাগ প্রবন্ধ লেখা হয়েছে সহজ সরল গল্পকথায়। যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করার। তাই পাঠকের মতামত কিংবা কোন পরামর্শ স্বাগত। বিজ্ঞানকথাতেও যার আলোচনা করা যেতে পারে। আসুন সবাই মিলে বিজ্ঞানকেও আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ করে তুলি। শরৎ যেমন আমাদের মনকে নতুন আলোয় ভরিয়ে তোলে, তেমনি বিজ্ঞানও হয়ে উঠুক আমাদের আলোক দিশা। শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫-এর প্রতিটি লেখা পাঠকের কাছে হয়ে উঠুক আলোর প্রদীপ।
আমরা আশা করছি, গতবারের মতো এবারের শারদীয় বিজ্ঞান লিখন ২০২৫ পত্রিকাও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানপ্রেমী প্রতিটি মানুষের বিজ্ঞান পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি বিজ্ঞান চেতনার বিকাশে সার্বিক ভূমিকা রাখবে।
'আসুন সবাই মিলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই।'